মায়াবী রোদ্দুরে

মায়াবী রোদ্দুরে
-রীণা চ্যাটার্জী

সুধী,
পূবালী হাওয়ার দাপট, উত্তুরে হাওয়ার কাঁপন, শিশির, কুয়াশা সবকিছুই একসাথে জানান দিয়ে যাচ্ছে, ‘আসছে, শীত আসছে..।’ প্রকৃতিও সাজতে শুরু করেছে রঙবাহারী ফুলের সম্ভারে। বিরক্তিকর একঘেয়ে তীব্র বায়স ধ্বনির সাথে শোনা যাচ্ছে সুমিষ্ট কাকলী। পরিযায়ী পাখির আগমনে,কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। সরীসৃপেরা ওৎ পেতে নিঃশব্দে আনাচে কানাচে শিকারের আশায়… উদরপূর্তির পালা সাঙ্গ করে নিরাপদ আস্তানায় শীতঘুম আর প্রজনন চক্রের পর্ব শুরু। সৃষ্টির এ এক অদ্ভুত লীলা, ছন্দে ছন্দে যেন রচিত প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ… অলিখিত সুরে গাঁথা।
পাখীর ডানার ওমের মতো বড়ো আদুরে, ভীষণ মায়াবী শীতের দুপুরবেলা। মিঠে রোদ্দুরে মন পেতে চায় অনেক কিছু, খোঁজে একটু উষ্ণতা। পেতে ইচ্ছে করে কখনো না পাওয়া অনুভূতি সঞ্চয়ের ডালিতে ভরে নিতে, যা কিছুটা গল্পে পড়া, সিনেমায় দেখা।
ভাবতে ভালো লাগে হয়তো বা আমি একটি শিশু …পুকুর পাড়ে বসে জলে নুড়ি ফেলে চলেছি আনমনে, আর চুপ করে বসে দেখে যাচ্ছি জলে তরঙ্গ তৈরী হওয়া, আর মিলিয়ে যাওয়া। নাহয় এক গাছের গোড়ায় মিঠে রোদে বসে আনমনে দেখে যাচ্ছি অনেক কিছু। দূরে চলে যাওয়া হঠাৎ পথিককে, ভেসে আসছে নানান পাখীর ডাক, ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার শব্দ শাখে শাখে..শীতের দিনের আলোটুকু ঝুপ করে সরে যাওয়ার আগে অনিচ্ছুক মনটাকে ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া, পাখীর বাসায় ফেরার মতো।
কখনো বা মন চায় প্রিয়জনের হাত ধরে সীমানা পেরিয়ে হারিয়ে যেতে, নীরবে নিভৃতে তাকে নিজের করে পেতে। আবার ফেলে আসা অতীত ও হাতছানি দেয় কল্পজগৎ ছেড়ে…কলেজের সেই দিনগুলো… অকারণ হেঁটে চলা, অপ্রয়োজনীয় কতো কথাকেই অতি প্রয়োজনীয় করে তোলা, আড়চোখে দেখা নেওয়া মায়াবী দুপুরের রঙীন দৃশ্যপট। কখনো বা সেই ছোটবেলার সাথীদের সাথে জটলায় বসে নানান কথা-গল্পে আর রকমারী মুখরোচকে মশগুল হয়ে দুপুর পেরিয়ে বিকেলের হাত ধরা। কিংবা সেই ছোট্ট বেলার পুতুল খেলার সংসার… রোদে বসে মিছে গৃহিণীপনা। মা, ঠাকুমার সংসারের অনুকরণে সাজিয়ে তোলা ক্ষণিকের সংসার…টুকরো কথায় আর অপটূ কর্মদক্ষতায়। ‘পুতুল খেলা’, ‘মায়ের সংসার’ মনে করিয়ে দিলো মায়ের স্নেহ, আদর, ভালোবাসা। মায়ের আঁচল ধরে চলা… শত ব্যস্ততার মাঝেও মায়ের প্রশয়ের হাসি, নির্ভয়ের, নির্ভরতার আশ্বাস। কোনো তুলনা, কোনো ভাষা হয় না পৃথিবীতে মায়ের স্পর্শের উষ্ণতার, মায়ের স্নেহের শীতলতার। বিশ্ব প্রকৃতির অনন্য রূপ ‘মা’, শিশুর এক পরম পাওয়া। বড়ো স্মৃতি মেদুরতায় অস্থির হয়ে পড়ছে মন আজ। সব…সব পাওয়া, চাওয়া যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে….

বাস্তবের রেশ ধরে ভালোলাগা, মন ছোঁয়া কিছু লেখার কথা…’শবর’, ‘মন্দ ভালোবাসা’, ‘উপহার’, ‘মমি’, ‘কেয়ার অফ ফুটপাত’, ‘আধুনিক মরণ’, ‘হেমন্তের চিত্রপটে’, ‘কাশ্মীর’, ‘বৃষ্টিকণা হয়ে…’, ‘পলাশগড়ের পিশাচ’, ‘চলমান শব’, আরো বেশ কিছু মন ছোঁয়া কলম।
কৃতজ্ঞতায় আলাপী মন সকল স্বজন সাথী, পাঠকদের কাছে।
শীতকালে বাঙালীর অতি প্রিয় নলেন গুড়ের স্বাদ,সুবাস। আলাপী মনের পক্ষ থেকে সুবাসিত নলেনের মিষ্টি শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

Loading

Leave A Comment